৫ মে আসছে

৫ মে আসছে। এই দিন এলেই যারা আমার মতো স্মৃতিকাতর হইতেন, অনেক কিছু করতে চাইতেন, কিন্তু স্বৈরাচারের ভয়ে পারতেন না, তারা এবার কী কী প্রস্তুতি নিয়েছেন? আমি তো ফেসবুকে পোস্ট পর্যন্ত দিতে পারতাম না। জনৈক প্রকাশক স্ক্রিনশট দিয়ে বসের কাছে পাঠাতেন, যেন এই অপরাধে এক রাতের নোটিশে আমাকে চাকরি থেকে স্যাক করা হয়। ‘চিরায়ত‘র শাপলা সংখ্যায় একটা লেখা ছাপা হলে সম্পাদক অধমের সঙ্গে একটা ছবি তুললেন, সেই ছবিটা ফেসবুক থেকে নামাতে বাধ্য করা হলো। (ওই প্রকাশক এইভাবে আরও কতজনের চাকরি খেয়েছেন কে জানে, এই টাইপের লোকগুলোর তালিকা করা দরকার।) সাবেক রহমত সম্পাদক একটা সংকলন করবেন করে ‘মহাজাগরণ দেখেছে বিশ্ব‘, করতে পারেন নাই। জাহাঙ্গীর ভাই আর রুম্মান ভাই মিলে একটা কবিতা সংকলন করার কথা, হয় নাই। ইমরান হাবিবি ভাই শহিদের একটা খসড়া তালিকা করে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলেন সহযোগিতা নিয়ে, জানি না কতদূর পেরেছিলেন। এক ভাই গত বছর ফোন করে আহত ও শহিদদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তার আর খবর পাই নাই। আমাদের অনেক না পারার মধ্যেও কিছু অ্যালবাম, ডকুমেন্ট, ফিল্ম, তালিকা, সঙ্কলন, পত্রিকার সংখ্যা, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গ্রন্থ নির্মাণ হয়ে গেছে সবার অগোচরে একদল ত্যাগী তরুণের হাত ধরে, সেগুলো সামনে নিয়ে আসা দরকার। প্রদর্শনী দরকার ছবিগুলোর। উসাইদ ভাইয়ের মতো গ্রাফিতি যারা জানে, তাদের উচিত নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়া। অনলাইন বুকশপগুলোর মাধ্যমে বইগুলো নিয়ে মেলা করা যায় কি না ভাবা যায়। স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। আহত, আক্রান্ত ও শহিদ পরিবারের কাছে সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার কথা আর কী বলব, চাঁদপুরের যে রিকশাঅলা ১৩ সালে ৩টা মেয়ে রেখে গেছেন আকাশের নীচে, তারা কি বেঁচে আছেন? তাদের কাছে সম্মিলিত ক্ষমা চাওয়া দরকার। ভালো হয়, খতিব রুহুল আমিনকে এনে ‘কওমি জননী‘ উপাধীটা তার মুখ থেকেই উইথড্র করাতে পারলে। সরকার কী করতে চায়, তা-ও বোঝা দরকার। একা কোনও উদ্যোগ নেওয়া কঠিন, সমন্বিতভাবেও সব করা যাবে না। বরং সারা দেশে যার যার জায়গা থেকে একটি ব্যানার ফেস্টুন হলেও টানানো উচিত। আমাদের বাড়ির গেটে আমরা একটা শাপলার প্রতীক রেখে দিয়েছি, অন্ততঃ সন্তানরা যেন না ভোলে।